Dhoni Poribortoner Dhara or Riti PDF Download
ধ্বনি পরিবর্তনের ধারা বা রীতিঃ-
ঐতিহাসিক
ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষার ধ্বনি পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে চারটি ধারা বা রীতি আবিষ্কার করেছেন
। এগুলি হল – ১। ধ্বনির আগম । ২। ধ্বনির
লোপ ৩। ধ্বনির স্থানান্তর বা বিপর্যাস ।
১। ধ্বনির আগমনঃ-
উচ্চারণ সহজ করার জন্য অনেক সময় শব্দের শুরুতে , মাঝে বা শেষে স্বরধ্বনি
বা ব্যঞ্জন ধ্বনির আগমন ঘটে, একেই ধ্বনির আগম বলে ।
ধ্বনির
আগম আবার দুই প্রকার – (ক) স্বরাগম এবং (খ) ব্যঞ্জনাগম ।
(ক)
স্বরাগম বা স্বরধ্বনির আগমঃ- শব্দের
শুরুতে, মাঝে বা শেষে স্বরধ্বনির আগমনকে স্বরাগম বলে ।
স্বরাগম
আবার তিন প্রকার । যথা –
(i)আদি
স্বরাগমঃ- শব্দের
আদিতে বা শুরুতে স্বরধ্বনির আগমন ।
যেমন – স্ত্রী
> ইস্তিরি
(ii)মধ্য
স্বরাগমঃ- শব্দের
মাঝে স্বরধ্বনির আগমন ।
যেমন – ভক্তি
> ভকতি ।
(iii)অন্ত্য
স্বরাগমঃ- শব্দের
শেষে স্বরধ্বনির আগমন ।
যেমন – কড়া
> কড়াই ।
(খ)
ব্যঞ্জন ধ্বনির আগমঃ- শব্দের
শুরুতে, মাঝে বা শেষে ব্যঞ্জন ধ্বনির আগমনকে ব্যঞ্জনাগম বলে । তবে স্বরধ্বনির মতো ব্যঞ্জন
ধ্বনির আগম বেশি মেলে না ।
ব্যঞ্জনাগম তিন প্রকার । যথা –
(i)আদি
ব্যঞ্জনাগমঃ- শব্দের
আদিতে ব্যঞ্জন ধ্বনির আগমনকে আদি ব্যঞ্জনাগম বলে ।
যেমন –
ওজা > রোজা ।
(ii)
মধ্য ব্যঞ্জনাগমঃ- শব্দের
মাঝে ব্যঞ্জন ধ্বনির আগমনকে মধ্যব্যঞ্জনাগম বলে ।
যেমন – পোড়ামুখী
> পোড়ারমুখী ।
(iii)
অন্ত্যব্যঞ্জনাগমঃ- শব্দের
শেষে ব্যঞ্জন ধ্বনির আগমনকে অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম বলে ।
যেমন – খোকা
> খোকন ।
অপিনিহিতিঃ- শব্দের
মধ্যে ‘ই’ বা ‘উ’ কার থাকলে তা যদি নির্দিষ্ট স্থানের আগেই উচ্চারিত হয় তাকে অপিনিহিতি
বলে ।
যেমন – করিয়া
> কইর্যা , সাধু > সাউধ ইত্যাদি ।
শ্রুতিধ্বনিঃ- পাশাপাশি
দুটি ধ্বনির উচ্চারনের সময় আসাবধানতা বশত বা শ্রুতি মাধুর্যের কারনে ওই দুটি ধ্বনির
মাঝে যদি অন্য একটি এসে যায় তাকে শ্রুতি ধ্বনি বলে ।
যেমন – শৃগাল
> শিআল > শিয়াল – এখানে ‘গ’ লোপ পেয়ে ‘য়’ এর আগমন ঘটেছে ।
শ্রুতি প্রধানত দুরকম ‘য়’ শ্রুতি
ও ‘ব’ শ্রুতি । এছাড়াও ‘দ’, ‘ল’, ‘হ’ , ‘র’ প্রভৃতি শ্রুতি আছে ।
‘য়’ শ্রুতি
– মাঝে ‘য়’ এর আগমন ঘটে । যেমন – মোদক > মোঅঅ > মোয়া ।
‘ব’ শ্রুতি
– মাঝে ‘ব’ এর আগমন ঘটে । যেমন – যাওয়া > যাবা ।
‘র’ শ্রুতি
– পুষ্ট > পুরুষ ।
‘হ’ শ্রুতি
– বেয়ারা > বেহারা ।
‘দ’ শ্রুতি
– বানর > বাঁদর ।
‘ওয়’ শ্রুতি
– যা > যাওয়া ।
(২) ধ্বনির লোপঃ-
শ্বাসাঘাত, দ্রুততা বা অসাবধানতা প্রভৃতি কারনে শব্দের কোনো কোনো ধ্বনি
বিলুপ্ত হয়ে যায় একে ধ্বনিলোপ বলে ।
এই ধ্বনিলোপ
দুই প্রকার । যথা – (ক) স্বরধ্বনি লোপ (খ) ব্যঞ্জন ধ্বনি ।
(ক)
স্বরধ্বনি লোপঃ- শব্দের
শুরুতে, মাঝে বা শেষে স্বরধনির বিলুপ্ত হওয়া কে বলে
স্বরলোপ ।
এই স্বরলোপ
আবার তিন প্রকার। যথা –
(i) আদিস্বর
লোপঃ- শব্দের শুরুতে স্বরধ্বনির লোপ হয় । যেমন – অলাবু > লাউ ।
(ii) মধ্য
স্বরলোপঃ- শব্দের মাঝে স্বরধ্বনির লোপ হয় । যেমন – ভগিনী > ভগ্নী ।
(iii) অন্ত্যস্বর
লোপঃ- শব্দের শেষে স্বরধ্বনির লোপ হয় । যেমন – ভিন্ন > ভিন ।
(খ) ব্যঞ্জনধ্বনি
লোপঃ- শব্দের শুরুতে, মাঝে বা শেষে ব্যঞ্জন ধ্বনির বিলুপ্ত হওয়া কে ব্যঞ্জন লোপ
বলে ।
স্বরলোপের
মতো ব্যঞ্জনলোপ ও তিন প্রকার । যথা –
(i) আদিব্যঞ্জন
লোপঃ- শব্দের শুরুতে ব্যঞ্জনধ্বনির লোপ হয় । যেমন – স্থান > থান ।
(ii) মধ্যব্যঞ্জন
লোপঃ- শব্দের মাঝে ব্যঞ্জনধ্বনির লোপ হয় । যেমন – ফলাহার > ফলার ।
(iii) অন্ত্যব্যঞ্জন
লোপঃ- শব্দের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনির লোপ
হয় । যেমন – গাত্র > গা ।
এছাড়াও আরও দুই ধরনের ধ্বনিলোপ আছে । তা হল – সমাক্ষরলোপ ও সমবর্ণ লোপ ।
(১)
সমাক্ষরলোপঃ- পাশাপাশি
অবস্থিত দুটি সমঅক্ষরের মধ্যে একটির লোপ হয় ।
যেমন
– বড়দিদি > বড়দি , পটললতা > পলতা ।
(২)
সমবর্ণ লোপঃ- পাশাপাশি
অবস্থিত দুটি সমবর্ণ শুধুমাত্র লেখার বানানে লোপ পায়,
উচ্চারণ
ঠিকই থাকে । যেমন – কৃষ্ণনগর > ক্রিশ্নোনগোর ।
৩।ধ্বনির রুপান্তরঃ-
শব্দের মধ্যে অবস্থিত কোন স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জন
ধ্বনি যদি একে অপরের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করে তখন তাকে ধ্বনির রপান্তর বলে । যেমন – মিটকেশ > মিশকেট ।
ধ্বনির রূপান্তর
নানা রকমের হয়ে থাকে । যেমন – অভিশ্রুতি, স্বরসংগতি, সমীভবন, বিষমীভবন, ঘোষীভবন,
অঘোষীভবন, মহাপ্রাণীভবন, অল্পপ্রানীভবন, মূর্ধ্যণীভবন, স্বতঃমূর্ধ্যণীভবন, উষ্মীভবন,
নাসিক্যীভবন, সকারীভবন, রকারীভবন, ধ্বনি সংকোচন ও ধ্বনি সম্প্রসারন ।
(i)
অভিশ্রুতিঃ- অপিনিহিতির পরের স্তর হল অভিশ্রুতি । অপিনিহিতির ‘ই’ বা ‘উ’ যদি লোপ পায়
বা নতুন রূপ লাভ করে তাকে অভিশ্রুতি বলে ।
যেমন – রাতি > রাইত > রাত
।
কালি > কাইল > কাল
।
(ii)
স্বরসংগতিঃ- শব্দ মধ্যস্থিত পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পৃথক স্বরধ্বনি
একে অপরকে প্রভাবিত করে একই রকম স্বরধ্বনিতে রূপান্তরিত হয় ।
যেমন – বিলাতি
> বিলিতি , সুপারি > সুপুরি ।
স্বরসংগতি
চার রকমের – প্রগত, পরাগত, মধ্যগত, ও অন্যোন্য ।
প্রগতঃ- পূর্ববর্তী
স্বরের সঙ্গে পরবর্তী স্বরের সংগতি । যেমন
– হিসাব > হিসেব ।
পরাগতঃ- পরবর্তী
স্বরের সঙ্গে পূর্ববর্তী স্বরের সংগতি । যেমন
– দেশি > দিশি ।
মধ্যগতঃ- পূর্ব
বা পরবর্তী স্বরের প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরের সংগতি । যেমন – বিলাতি > বিলিতি ।
অন্যোন্যঃ- পূর্ববর্তী
বা পরবর্তী পারস্পরিক প্রভাবে পারস্পরিক পরিবর্তন । যেমন – শোনা > শুনা , নাটকিয়া > নাটুকে ।
(iii)
সমীভবনঃ- শব্দ মধ্যস্থিত
পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পৃথক ব্যঞ্জনধ্বনি একে অপরকে প্রভাবিত করে একই রকমব্যঞ্জন ধ্বনিতে
রূপান্তরিত হয় ।
সমীভবন
তিন রকমের – প্রগত, পরাগত, অন্যোন্য ।
প্রগতঃ– পূর্ববর্তী
ব্যঞ্জনের সঙ্গে পরবর্তী ব্যঞ্জনের সংগতি । যেমন
– চক্র > চক্ক, পদ্ম > পদ্দ,
পরাগতঃ- পরবর্তী
ব্যঞ্জনের সঙ্গে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সংগতি । যেমন – গল্প > গপ্প , কর্পূর
> কপ্পূর ।
অন্যোন্যঃ- পূর্ববর্তী
বা পরবর্তী ব্যঞ্জনের পারস্পরিক প্রভাবে পারস্পরিক পরিবর্তন । যেমন – বৎসর > বছর , মৎস্য > মচ্ছ ।