Bengali Banjon Dhoni & Borno
ব্যঞ্জন ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে
সম্যক ধারণা
১। ব্যঞ্জন ধ্বনি কাকে বলে ?
উঃ- যে সকল ধ্বনি উচ্চারনের
সময় মুখবিবরের কোথাও না কোথাও বাধা প্রাপ্ত হয়ে উচ্চারিত হয়,তাকে ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে।
উদাহরণঃ- ক্, খ্, ইত্যাদির উচ্চারিত
রূপ।
ব্যঞ্জন ধ্বনি
স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে তবেই উচ্চারিত হতে পারে।
২। ব্যঞ্জন বর্ণ কাকে বলে ?
উঃ- ব্যঞ্জন ধ্বনির লিখিত রুপকেই
ব্যঞ্জন বর্ণ বলা হয়।
বাংলায় ব্যঞ্জন
বর্ণ ৪০ টি
। “ত্বে” একটি ‘ব’এর ব্যবহার না থাকায় ৩৯ টি বর্ণ ব্যবহৃত হয়। ব্যঞ্জন বর্ণ গুলি হল
– ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল ব শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ ং ঃ
ঁ ।
বাংলায় ৩৯টি
ব্যঞ্জন বর্ণের মধ্যে – মাত্রাহীন বর্ণ – ৬টি ( ঙ, ঞ, ৎ, ং, ঃ, ঁ )
অর্ধমাত্রার
বর্ণ – ৭টি (খ, গ, ণ,ধ, থ, ধ, প, শ )।
পূর্ণমাত্রার
বর্ণ – বাকি ২৬টি ব্যঞ্জন বর্ণ।
ব্যঞ্জন
ধ্বনির শ্রেণিবিভাগঃ–
ব্যঞ্জন ধ্বনিকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা
যায় –
(ক) উচ্চারন স্থান অনুযায়ী
(খ) উচ্চারন প্রকৃতি অনুযায়ী
উচ্চারন স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জন ধ্বনিকে সাধারনত সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ছকের সাহায্যে নীচে দেখানো হল –
ধ্বনি | উচ্চারণ স্থান | উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী বর্গীকরণ |
---|---|---|
ক,খ,গ,ঘ, ঙ | কণ্ঠ ও জিহ্বামূল | কণ্ঠ ব্যঞ্জন |
চ,ছ,জ,ঝ,শ | তালু ও জিহ্বামূল | তালব্য ব্যঞ্জন |
ট, ঠ, ড, ঢ, ড়, ঢ় | মূর্ধা ও উল্টানো জিহ্বাগ্র | মূর্ধন্য ব্যঞ্জন |
ত,থ,দ,ধ | দন্ত ও জিহ্বাগ্র | দন্ত ব্যঞ্জন |
ন,র,ল,স | দন্তমূল ও জিহ্বাগ্র | দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন |
প,ফ,ব,ভ,ম | ওষ্ঠ ও অধর | ওষ্ঠ ব্যঞ্জন |
হ | কণ্ঠনালী | কণ্ঠনালী |
উচ্চারনের
প্রকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগঃ-
১। স্পর্শ
ধ্বনিঃ- উচ্চারনের সময় মুখবিবরের কোনো না কোনো অংশের সাথে জিহ্বার স্পর্শ হয়।
উদাহরনঃ- ‘ক’
থেকে ‘ম’ পর্যন্ত ২৫ টি ব্যঞ্জন বর্ণ।
২। ঘৃষ্ট
ধ্বনিঃ-
উচ্চারনের সময় শ্বাসবায়ু জিহ্বা এবং তালুর সংকীর্ণ স্থান দিয়ে ঘর্ষিত হয়ে নির্গত হয়।
উদাহরনঃ- চ,ছ,জ,ঝ
৩। উষ্ম
ধ্বনিঃ-
উচ্চারনের সময় শ্বাসবায়ু দ্বারা শিস্ –এর মতো আওয়াজ হয়।
উদাহরনঃ- শ, স, ষ, হ
৪। পার্শ্বিক
ধ্বনিঃ-
উচ্চারনের সময় শ্বাসবায়ু জিহ্বার অগ্রভাগে বাধা পেয়ে জিহ্বার দুপাশ দিয়ে নির্গত হয়।
উদাহরনঃ- ল
৫। কম্পিত
ধ্বনিঃ-
উচ্চারনের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ কম্পিত হয়।
উদাহরনঃ- র
৬। তাড়িত
ধ্বনিঃ-
উচ্চারনের সময় শ্বাসবায়ু জিহ্বার তাড়নায় দ্রুত নির্গত হয়।
উদাহরনঃ- ড়, ঢ়
৭। নাসিক্য
ধ্বনিঃ-
উচ্চারনের সময় কিছুটা শ্বাসবায়ু নাসিকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে উচ্চারণ কিছুটা
নাকিসুরে হয়।
উদাহরণঃ- ঙ, ঞ, ন, ণ, ম
৮। অন্তস্থ
ধ্বনিঃ-
স্পর্শ ধ্বনি ও উষ্ম ধ্বনির মাঝে যেগুলি অবস্থান করে।
উদাহরনঃ- য ,র, ল, ব
উচ্চারনের
গাম্ভীর্য অনুযায়ী ব্যঞ্জন ধ্বনিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় –
১। ঘোষ
ধ্বনিঃ-
ঘোষ কথার অর্থ হল গাম্ভীর্য। যে ধ্বনি গুলির গাম্ভীর্য বেশি তাদের বলা হয় ঘোষ ধ্বনি।
উদাহরনঃ- গ ,ঘ, ঙ, জ,ঝ, ঞ (প্রতিটি
বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনি)
২। অঘোষ
ধ্বনিঃ-
যে ধ্বনি গুলির গাম্ভীর্য কম তাদের বলা হয় অঘোষ ধ্বনি।
উদাহরনঃ- ক, খ ; চ, ছ ( প্রতিটি বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি)
।
এই
ঘোষ এবং অঘোষ ধ্বনিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
১। মহাপ্রান
ধ্বনিঃ-
যে ধ্বনি উচ্চারনের সময় শ্বাসবায়ু অপেক্ষাকৃত বেশি নির্গত হয়, তাকে মহাপ্রান ধ্বনি
বলে। উদাহরনঃ- খ, ঘ, ছ, ঝ (প্রতিটি বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনি) ।
২। অল্পপ্রান
ধ্বনিঃ-
যে ধ্বনি উচ্চারনের সময় শ্বাসবায়ু অপেক্ষাকৃত কম নির্গত হয় তাদের অল্পপ্রান ধ্বনি বলে। উদাহরনঃ- ক, গ, চ, জ (প্রতিটি বর্গের
প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনি) ।
‘ৎ’ ও ‘ঃ’
এদের নিজ্স্ব কোনো উচ্চারণ নেই এরা সবসময় এদের আগে যে বর্ণটি থাকে তাকে আশ্রয় করে উচ্চারিত
হয় তাই এদের আশ্রয়স্থানভাগী বা অযোগবাহ বর্ণ বলে।