Bengali Sabdo & Sabdo Vandar Part - 4
(১) জোড়কলম
শব্দঃ-
একটি শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের অংশবিশেষ বা একটি শব্দের অংশবিশেষের সঙ্গে অন্য
একটি শব্দ বা একটি শব্দের অংশবিশেষের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের অংশবিশেষ যুক্ত হয়ে যদি
নতুন একটি শব্দ তৈরি হয় তখন তাকে বলা হয় জোড়কলম
শব্দ।
যেমন ‘ধোঁয়াশা’ একটি শব্দ । এই শব্দটির সৃষ্টি
হয়েছে 'ধোঁয়া' এবং 'কুয়াশা' এই দুটি শব্দের অংশবিশেষের যোগে -- ধোঁয়া (পুরো শব্দ) + কুয়াশার অংশবিশেষ ' শা '
অর্থাৎ ধোঁয়া + শা = ধোঁয়াশা ।
আরো কয়েকটি
উদাহরণ :
বাঙাল
+ ঘটি = বাটি সিংহ + ব্যাঘ্র = সিংঘ্র হাঁস + সজারু = হাসজারু
বাংলা
+ ইংরেজি = বাংরেজি নিশ্চল + চুপ = নিশ্চুপ জেদি + তেজালো = জেদালো
বাংলা
+ ইংলিশ = বাংলিশ
(২) মিশ্র
শব্দ বা সংকর শব্দ : বিভিন্ন ভাষার বা একই ভাষার শব্দ ( প্রত্যয় , উপসর্গ ) ইত্যাদি মিলিত
হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হলে তাকে মিশ্র শব্দ বা সংকর শব্দ বলে।
উদাহরণ:
পাও
(পর্তুগিজ) + রোটি (হিন্দি) = পাওরুটি।
মাস্টার
(ইংরেজি) + 'ঈ' প্রত্যয় = মাস্টারী।
কায়দা
(আরবি) + কৌশল (তৎসম) = কায়দাকৌশল।
নি
(বাংলা) + খরচ (ফার্সি) = নিখরচা ।
(৩) লোকনিরুক্তি: উচ্চারণের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত
জটিল বা অপরিচিত শব্দ যখন লোক-সাধারণের উচ্চারনে
অল্পবিস্তর পরিবর্তিত হয়ে পরিচিত শব্দের সাদৃশ্য লাভ করে তখন তাকে বলা হয় লোকনিরুক্তি।
উদাহরণ :
আর্মচেয়ার
> আরামচেয়ার । হসপিটাল > হাসপাতাল
।
ভ্রমার্থী > ভীমরথী । শোভন পাপড়ি > শন্ পাপড়ি ।
(৪) বিষমচ্ছেদ : অনেক সময় সাদৃশ্যের প্রভাবে
শব্দের যথাযথ বিশ্লেষণ না হয়ে বিকৃত ভাবে হয় এবং তাতে নতুন শব্দের উদ্ভব ঘটে। শব্দের
এই বিকৃত বিশ্লেষণকে বিষমচ্ছেদ বলা হয়।
উদাহরণ : বিধবা , নিধুবন ইত্যাদি।
(৫) শব্দ বিভ্রম
: অনেক
সময় অজ্ঞানতাবশত প্রকৃত শব্দের বদলে একই ধরনের কিন্তু ভিন্ন অর্থ যুক্ত অন্য শব্দের
ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই ধরনের বিভ্রম কে বলা হয় শব্দ বিভ্রম।
যেমন : ‘ক্যাশ>কেস’ উচ্চারণ
।
(৬) ভুঁইফোড়
শব্দ বা ভুয়া শব্দ : বাংলা শব্দ ভান্ডারে এমন বেশ কিছু শব্দ আছে যে শব্দগুলির কোন মূল নেই অথচ
তাকেই মূল শব্দ বলে ধরে নেয়া হয়, সেইরকম শব্দগুলিকেই বলা হয় ভুঁইফোড় শব্দ বা ভুয়া
শব্দ।
যেমন - নিরঞ্জন, প্রোথিত ।
৭) মুন্ডুমাল
শব্দ :
কোন বাক্যাংশের অন্তর্গত শব্দগুলির প্রথম অক্ষর গুলি ব্যবহার করে যে শব্দ গঠিত হয়
তাকে বলা হয় মুন্ডমাল শব্দ।
যেমন - ল. সা. গু. , গ. সা. গু , B.A , M.A ইত্যাদি।
৮) খন্ডিত
শব্দ :
যখন কোন সম্পূর্ণ শব্দের অংশবিশেষের দ্বারাই শব্দটির পুরো অর্থ প্রকাশ পায় তখন তাকে
বলা হয় খন্ডিত শব্দ।
যেমন: বেনারসি শাড়ি> বেনারসি , বাইসাইকেল> সাইকেল।
৯) ধন্যাত্মক
শব্দ বা অনুকার শব্দ : কোন ধ্বনির যেরূপ শব্দ সেইরূপ আওয়াজকে প্রকাশ করার জন্য যে শব্দ ব্যবহার
করা হয় তাকে বলা হয় ধন্যাত্মক শব্দ।
যেমন: জলের শব্দ 'কল কল' , হাওয়ার
শব্দ 'শন্ শন্' , বৃষ্টি পড়ে 'টাপুর টুপুর' ইত্যাদি।
১০) দ্বিমাত্রিকতা
: কোন বড়
শব্দকে উচ্চারণের সুবিধার জন্য দুটি ভাগে বা মাত্রায় ভাগ করে উচ্চারণের পদ্ধতিকে বলা
হয় দ্বিমাত্রিকতা।
যেমন: ইহলোক - ইহ+লোক , রামধনু
- রাম+ধনু , জরাসন্ধ - জরা+ সন্ধ ইত্যাদি।
১১) অপভাষা
: এক জনগোষ্ঠীর
লোক যখন অন্য জনগোষ্ঠীর ভাষা সঠিকভাবে না শিখে ভুল শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করে তখন সেটাকে
বলা হয় অপভাষা।